রূপগঞ্জের ৪২ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য ॥ লেখাপড়া ব্যাহত
রূপগঞ্জ সংবাদদাতাঃ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ৪২ টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূণ্য রয়েছে। নিয়োগ ও পদোন্নতি না পাওয়ায় শূণ্য পদে সহকারী শিক্ষকরাই ভারপ্রোপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে বিদ্যালয়গুলোতে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ছে। তাতে ব্যাহত হচ্ছে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান কার্যক্রম।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, বিদ্যালয়গুলোতে প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য থাকায় কোন কোন বিদ্যালয় যথাসময়ে ক্লাস বসছে না। কিংবা ছুটিও হচ্ছে না। কখনো কখনো বিদ্যালয় ছুটি না হলেও শিক্ষকের অভাবে পুরো ক্লাস হয় না। তাতে শ্রেণির পাঠদান কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। আবার ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ইচ্ছা থাকা সত্বেও শিক্ষকের অভাবে ক্লাস পরিচালনায় বিঘœ ঘটছে।
শূণ্য পদে সহকারী শিক্ষক থেকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হওয়ায় অন্যান্য সহকারী শিক্ষকরা তাঁর নির্দেশ মানতে কেউ কেউ রাজী নন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা অন্য সহকারী শিক্ষকদের নির্দেশ দিতেও হিমশিম খাচ্ছেন। এরকম নানা জটিলতায় ভুগছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা প্রদান কার্যক্রম।
শূণ্য পদে শিক্ষকদের পদোন্নতিতে ৬৫ ভাগ ও সরকারি বিধি মোতাবেক সরাসরি নিয়োগ ৩৫ ভাগ নিয়োগ দেয়ার বিধান রয়েছে। একদিকে প্রধান শিক্ষকের শূণ্য পদগুলো পদোন্নতিতে পূরণ করলে সহকারি শিক্ষকদের পদ শূণ্য হয়ে পড়বে। অন্যদিকে প্রধান শিক্ষকের পদগুলো দীর্ঘদিন শূণ্য থাকায় লেখাপড়া চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
প্রধান শিক্ষকের ৪২ টি পদ শূণ্য থাকার পরও পুণরায় রূপগঞ্জ উপজেলা থেকে একজন প্রধান শিক্ষককে নিয়মবহির্ভূত ভাবে বদলি করে জেলা সদরে যোগদানের জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিস পায়তারা করছে। এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে প্রধান শিক্ষকের শূণ্য পদের সংখ্যা বেড়ে ৪৩ এ উন্নীত হবে।
রূপগঞ্জ উপজেলা সদরের দুই বর্গ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত ৩টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদশূণ্য সহ উপজেলার ৪২ টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য রয়েছে। গত ১০ বছরের মধ্যে পদোন্নতিতে কোন শূণ্য পদ পূরণ করা হয়নি। পদোন্নতির জন্য শিক্ষকদের তালিকা তৈরি করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তাঁদের নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। কোন কোন শিক্ষক ৩০-৩২ বছর ধরে চাকুরি করেও সকল যোগ্যতা থাকা সত্বেও তাঁদের পদোন্নতি না হওয়ায় শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বিদ্যালয়ের বিভিন্ন সুবিধা গ্রহণ, নানা অজুহাতে সময়মত স্কুলে না আসা, যথাসময়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করা, শিক্ষা অফিসে কাজ আছে বলে স্কুল থেকে বের হয়ে ব্যক্তিগত কাজ করা, সর্বোপরি প্রধান শিক্ষকের পদমর্যাদায় নিয়োজিত থাকার জন্য প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের কেউ কেউ শিক্ষা অফিসের সংশ্লিষ্টদের মোটা অংকের টাকা প্রদান করে আসছেন। এ সুযোগে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসারদের কেউ কেউ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকদের ভুল, ত্রুটি চিহ্নিত করে উৎকোচের বিনিময়ে সে সকল সমস্যার সমাধান করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
মঙ্গলখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ও নারায়ণগঞ্জ জেলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, একদিকে দীর্ঘদিন পদোন্নতিতে প্রধান শিক্ষকের শূণ্য পদ পূরণ না করায় সিনিয়র শিক্ষকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। অন্যদিকে কোমলমতি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। দীর্ঘদিন প্রধান শিক্ষকের শূণ্য পদ পূরণ করায় সহকারী শিক্ষক পদেও নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। তাতে রূপগঞ্জের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
রূপগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার জাহেদা আখতার বলেন, প্রধান শিক্ষকের শূণ্য পদগুলো পূরণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে। শিগগিরই শূণ্য পদে নিয়মানুযায়ী নিয়োগ করা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।